ক্যাটাগরির বিচারে এটা একটা নন-ফিকশন বই। বিশাল এই বইয়ের মূলকথা গুলো নিয়ে এই লেখা।
এই বইয়ের মূল পয়েন্টগুলো দেওয়ার ট্রাই করবো এই লেখায়। (বইয়ের থেকে পাওয়া লেসনস, রিভিউ না)
এই ধরনের বইগুলো পড়া সাধারণত বেশ কষ্টকর কারণ ফিকশনের মতো থ্রিল,টুইস্ট, একশন, রোমান্স, ট্রাজেডি থাকে না এখানে। যা থাকে তা হয়তো অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু সাধারণ পাঠকরা এই ধরণের বইয়ে খুব একটা আগ্রহ পান না। সেদিকটা খেয়াল রেখে এই বিশাল সাইজের বইতে থাকা বিষয়বস্তু সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করার প্রয়াস হিসেবে দেখার আবেদন রইলো।
12 Rules for Life: An Antidote to Chaos
-Jordan B. Peterson.
কানাডিয়ান সাইকোলজি প্রফেসর ডঃ জর্ডান পিটারসনের বেস্ট সেলিং বই 12 Rules for Life: An Antidote to Chaos (2018) এ কিভাবে মানুষ জীবনের দুঃখ-কষ্টের সাথে ডিল করবে তার সম্পর্কে ১২ টা মূল নীতির কথা উল্লেখ করেছেন৷
তিনি মনে করেন, জাতীয় জীবনে এই মূল-নীতি গুলোর যথাযথ প্রয়োগ সম্ভব হলে নৈতিক এবং ব্যালেন্সড সুখী জীবন গঠন করা সম্ভব।
বইয়ে ১২ টি চ্যাপ্টার আছে আর প্রতি চ্যাপ্টারে একটা মূল মেসেজ আছে, মোট ৪০৯ পেইজে লেখক ১২ টি রুলস বর্ণনা করেছেন। আমি সেই রুলস গুলো সংক্ষিপ্ত আকারে নিচে দিয়ে দিচ্ছি।
- যথাযথ আত্মবিশ্বাসী হতে পারলে আপনি সামাজিক এবং ব্যাক্তি-পর্যায়ের শোষণ প্রতিরোধ করতে পারবেন। নিজের অধিকারের জন্য নিজেকেই দাঁড়াতে হবে।
- এই হতাশাজনক পৃথিবীতে আপনার সবচেয়ে আপনজন আপনি নিজেই, তাই নিজের খেয়াল নিজে নিতে শিখুন। যেমন করে আপনি আপনার আপনজনের খেয়াল রাখেন ঠিক তেমনি নিজের দিকেও মনোযোগ দিন।
- নিজের আশেপাশে সফল মানুষদেরই জায়গা দিন, যারা নিজেদের জীবন নিয়ে সুখী। যদি আপনি হতাশাগ্রস্ত মানুষদের সাথে ঘনিষ্ঠ থাকেন তাহলে আপনাকেও হতাশা জেঁকে ধরবে।
- যদি আপনি জীবনে পূর্ণতা এবং স্বাধীনতা চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে নিজের পরিচয় এবং অবস্থান সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে৷ প্রতিনিয়ত নিজের উন্নতির দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
- যারা সন্তান লালনপালন করছেন বা করবেন তাদের উচিত হবে সন্তানদেরকে যত্নের সাথে শৃঙ্খলা শিখিয়ে শাসন করা। ছোটবেলা থেকেই তাদের সুশৃঙ্খল করে গড়ে তুলতে হবে নাহলে ভবিষ্যতে সমাজ তাদের শক্ত হাতে শৃঙ্খলা শেখাবে।
- মানবতার অবক্ষয়ের জন্য বিশ্বের সব মানুষকে দায়ী না করে আগে নিজের মধ্যে মানবিকতা চর্চা করতে হবে৷ নিজে ভালো হলে জগৎ ও ভালো হবে৷
- কাউকে অন্ধ অনুসরণ না করে নিজের বিবেক দিয়ে বিচার করে ওই বিবেচনা অনুযায়ী সংগ্রামে নামতে হবে। অন্য কারো কথায় প্রলুব্ধ না হয়ে নিজের বিবেকের সঠিক ব্যবহার করতে হবে।
- সবসময়ই সত্য বলার চেষ্টা করতে হবে। সত্য আমাদের ব্যক্তিগত অনুশোচনা এবং সামাজিক অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে৷ যদি সত্য বলতে নাও পারেন অন্ততপক্ষে মিথ্যাটা বলবেন না।
- মনোযোগ দিয়ে শুনবেন। কারো কথা সত্যিকারের মনোযোগ দিয়ে শোনা ওই মানুষটিকে বোঝার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এতে নিজেরও মানসিক বিকাশ হয়। এখন মানুষ শোনে কম বলে বেশি, যা মোটেই কাম্য নয়।
- যেকোনো সমস্যার সঠিক ব্যাখ্যা সমাধানের পথ মসৃণ করে। সমস্যা লুকিয়ে কারো কোনো লাভ হয়। যখন কোনো অসংগতি উল্লেখ করবেন তখন নির্ভয়ে পরিষ্কারভাবেই উল্লেখ করবেন।
- লিঙ্গ ব্যবধান একটা প্রাকৃতিক বিষয়, এটা সমাজের সৃষ্টি নয়। তাই লিঙ্গ সমতা বা Gender Equality বাস্তবসম্মত নয়। এই ব্যবধান একেবারে দূর করা সম্ভব নয়। ঠিক তেমনি প্রতিবন্ধীদের সমতাও সম্ভব না।
- ব্যক্তিগত কিংবা রাষ্ট্রীয় সংকটে ছোট ছোট খুশির উপলক্ষগুলো মানসিক শান্তি নিয়ে আসতে পারে। নিজস্ব মানসিক প্রশান্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়।
শেষ রুলটি নিয়ে আলাদাভাবে কিছু কথা বলা উচিত,
লেখক এই চ্যাপ্টারে নিজের ব্যক্তিজীবনের একটা দুঃখজনক ব্যাপার শেয়ার করেছেন। তিনি যখন জানতে পারেন তার মেয়ে মিখাইলার হাড়ক্ষয়ের রোগ আছে তখন তার সেই মুষড়ে পড়া সময়ের স্মৃতি পাঠক খুব ভালোভাবেই অনুভব করতে পারবেন। তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে আমরা অনাকাঙ্ক্ষিত ট্রাজেডি গুলোর সাথে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারি। বর্তমান পরিস্থিতির উন্নতিতে মননিবেশ করতে পারলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া গুলো আমরা সঠিক পথে পরিচালনা করা সম্ভব হবে।
জর্ডান পিটারসেনের এই বইটি ৪০টিরও অধিক ভাষায় অনূদিত হয়েছে, এতেই বোঝা যায় কতটা জনপ্রিয় একটা বই এটা। বর্তমান এই হতাশাজনক সময়ে যাদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব প্রতিনিয়ত দংশন করছে তাদের জন্য এই বইয়ে দেওয়া রুলস গুলো বেশ ভালো কাজে আসবে।