আরমিন মেইওয়েস (Armin Meiwes) একজন জার্মান নাগরিক এবং জার্মানির প্রথম ক্যানিবাল হিসেবে পরিচিত। যেসব মানুষ নর মাংস খাবার জন্য তীব্র নেশা অনুভব করে তাদের বলে ক্যানিবালিস। পৃথিবিতে অনেক জায়গায় বেশ কিছু নরমাংস ভোজী মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়। আরমিন মেইওয়েস তাদের মধ্যে অন্যতম।
আরমিন মেইওয়েস ১৯৬১ সালের ১লা ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন ছোট। বাকি দুই ভাই ছিল তার সৎ ভাই। মেইওয়েস এর যখন ৮ বছর বয়স তার বাবা মেইওয়েস ও তার মাকে ত্যাগ করেন। ক্যানিবালিজম এর প্রতি ঝোঁক তখন থেকে দানা বাঁধতে থাকে তার মনে। পেশায় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার এই মানুষটির পরবর্তীতে হরর মুভি তে মানুষের মাংস খেতে দেখে তার নিজের ভিতর এই ভয়ঙ্কর ফ্যান্টাসি ঢুকে যায়। আমাদের মত রক্ত মাংসের মানুষ হয়েও আরমিন মেইওয়েসের মধ্যে লুকিয়ে ছিল একটি পশু সত্ত্বা যা তাকে মানুষের মাংস খাওয়ার নেশায় পাগল করে তুলেছিলো। পরবর্তীতে একসময় মেইওয়েস পুলিশের কাছে বিবৃতি দেন যে, পরিবারের ভাঙ্গন তার একাকীত্ব বাড়িয়ে দেয় যা একসময় তার মধ্যে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত ফ্যান্টাসিকে উসকে দেয়।
এরপর মেইওয়েস ভলেন্টিয়ার এর খোঁজে ইন্টারনেটে “দা ক্যানিবাল ক্যাফে” নামে একটি ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন দিতে থাকেন। মেইওয়েস এমন একজন কে খুঁজছিলেন যে নিজে তার কাছে আসবে এবং স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করবে যাতে মেইওয়েস তার শরীরে মাংস টুকরো টুকরো করে খেতে পারে। বিজ্ঞাপনটি ছিল এরকম,
“Looking for a normally built 18-to 25 years old to be slaughtered and then consumed.”
কিছুদিনের মধ্যেই ২০০১ সালের ১লা মার্চ মেইওয়েসের এই বিজ্ঞাপনে সাড়া দিয়েছিল বার্লিনের একজন ইঞ্জিনিয়ার, ৪৩ বছর বয়সী ‘বারন জুরগার্ন ব্রান্ডেস‘ (Bernd Jürgen Armando Brandes )নামের এক লোক। যদিও বারন জুরগার্ন ছাড়া অনেক মানুষ মেইওয়েসের বিজ্ঞাপনে সাড়া দিয়েছিল কিন্তু পরে পিছিয়ে যায়। তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কখনো জোর প্রয়োগ করেননি মেইওয়েস।
২০০১ সালের ৯ মার্চ মেইওয়েস তার রোটেনবার্গের বাড়িতে ব্র্যান্ডিসের সাথে মিলিত হন। তারা দুইজন একটি ভিডিও টেপ তৈরি করে যেখানে অবশ্যই ব্রান্ডিস এর সম্মতিতে দেখানো হয় মেইওয়েস কর্তৃক ব্রান্ডিসকে হত্যা করার প্রক্রিয়া। যা স্বেচ্ছায় মেনে নিয়েছিলেন ব্রান্ডিস। প্রথমেই ব্রান্ডিসের যৌনাঙ্গ দাত দিয়ে কাটার চেষ্টা করে মেইওয়েস, ব্যর্থ হলে পরে তা ছুরি দিয়ে কেটে ফেলে। তীব্র ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন ব্রান্ডিস। যদিও ব্রান্ডিসকে আগে ঘুমের ওষুধ ও কাশির সিরাপ খাইয়ে নেয়া হয়েছিল অবসাদগ্রস্ততা আনার জন্য। এরপর মেইওয়েস তা আগুনে পুড়িয়ে ব্রান্ডিসের সামনে খায়। শুধু তাই নয় ব্রান্ডিস নিজেও তার যৌনাঙ্গের একটা অংশ খেয়ে ছিল ওই অবস্থায়। এরপর মেইওয়েস ধারালো ছুরি দিয়ে ব্রান্ডিস এর ঘাড়ে আঘাত শুরু করে এবং ব্রান্ডিসকে টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলে। পুরো ঘটনাটি ৪ ঘণ্টার ভিডিও টেপে রেকর্ড হয়েছিল। মেইওয়েস ব্রান্ডিসের বডির টুকরোগুলোকে পিজ্জা বক্সে ফ্রিজে রেখে দশ মাস ধরে ভক্ষণ করেছিল। ব্রান্ডিসকে মেরে, মাংস কেটে রান্না করে খাওয়ার ৪ ঘন্টার দৃশ্য ভিডিও ক্যামেরাতে ধারণ করেন তিনি, যা পরবর্তীতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
২০০২ সালে একজন কলেজছাত্র ইন্টারনেটে মেইওয়েসের একটি নতুন বিজ্ঞাপন দেখে বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করে। পুলিস এই সূত্র ধরে মেইওয়েসের বাসায় তল্লাসি চালিয়ে একটি ভিডিও টেপ ও ব্রান্ডিস এর বডি পার্টসগুলো খুঁজে পায় এবং ফলশ্রুতিতে মেইওয়েসকে গেফতার করা হয়। ঘটনাটি জার্মান মিডিয়াতে অনেক সাড়া ফেলে। কারণ অবাক ব্যাপার হলো জার্মান আইন ক্যানিবালিজমকে অবৈধ করে নাই। আর ব্রান্ডিস নিজেই, নিজের সম্মতিতে ক্যানিবালিজম এর বলি হয়েছে। তাই এটিকে খুনও বলা যাবে না।
অন্যদিকে মেইওয়েস নিজেই আদালতে তার কৃতকর্মের কথা স্বীকার করে। আদালতে মেইওয়েসের একটি মন্তব্য,
“My friend enjoying dying, death. I only waited horrified, for the end after doing the deed, it took so terribly long.“
মেইওয়েস এও বলেছিল যে, সে এতে যৌন আনন্দ পেয়েছিল।
আদালত মেইওয়েসকে ২০০৪ সালের ৩০শে জানুয়ারি ৮ বছর ৬ মাস কারাবন্দী থাকার আদেশ দেয়। কিন্তু ২০০৫ সালে জার্মান আদালত রিট্রায়ালে মেইওয়েসকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। তার উপর খুনের অভিযোগ আনা হয় আর এও বিবেচনা করা হয় সে সাধারণ মানুষের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে।
ব্যক্তিজীবনে মেইওয়েস অত্যন্ত অমায়িক ছিলেন। তাকে দেখে কখনোই মনে হয়নি সে মানুষের মাংস খেতে পারে। মেইওয়েস ছিলেন ভালো চাকুরীজীবী, বন্ধু ও প্রতিবেশীদের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন। মেইওয়েস ও ব্রান্ডিস এর ঘটনাটি এতটাই বাস্তব যা কোনো হরর মুভির গল্পকেও হার মানায়।
মেইওয়েস ও ব্রান্ডিসের ঘটনাটি নিয়ে তৈরি হয়েছে বেশকিছু মুভি —
২০০৫ এ নির্মিত হয়েছে “An appitite for Bernered Brady“.
২০০৬ এ নির্মিত হয়েছে “Gimm love” এবং “Cannibal.”
References:
Armin Meiwes on Wikipedia