ব্যাংকে চাকরির প্রস্তুতি, যোগ্যতা, নিয়োগ প্রক্রিয়া, সুযােগ সুবিধাসমূহ | Bank Job in Bangladesh

ব্যাংকে চাকরির (Bank Jobs) প্রস্তুতি

একটি দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির অন্যতম পূর্ব শর্ত হল সেই দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামাের উন্নয়ন সাধন করা। ব্যাংক একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান যা অর্থনৈতিক অবকাঠামাের মূলস্তম্ভ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। একটি দেশের ব্যাংকিং খাত যত বেশী সুপ্রতিষ্ঠিত সেই দেশের অর্থনীতি তত দ্রুত উন্নতি লাভ করবে। স্বাধীনতালগ্নে এই দেশে গুটিকয়েক ব্যাংক প্রতিষ্ঠানের সূচনা হলেও ৯০ এর দশকের পর এই দেশে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রসার ঘটেছে। বর্তমানে দেশে সরকারি ব্যাংকের পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় দেশের ব্যাংকিং কাঠামােতে এক আমূল পরিবর্তন এসেছে। এইসব ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান যেমনভাবে অবদান রাখছে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে, তেমনিভাবে অবদান রেখে চলেছে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বেকার সমস্যা সমাধানে। অধিক বেতন আর সুন্দর ও স্বচ্ছল জীবন-যাপনের আশায় আজ দেশের বহু শিক্ষিত যুবক পেশা হিসেবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান তথা ব্যাংকে চাকরি বেছে নিতে শুরু করেছে।

ব্যাংকে চাকরির (Bank Jobs) প্রস্তুতি

কেন পেশা হিসেবে ব্যাংকে চাকরি?

প্রায় ১৪.৪৪ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত এদেশে বেকার সমস্যা একটি প্রকট সমস্যা। দেশের মােট জনসংখ্যার প্রায় ৩৮ শতাংশ বেকার। তার মধ্যে প্রায় ১ কোটি ৫০ লক্ষ শিক্ষিত বেকার। বেকার সমস্যা দূরীকরণের জন্য প্রয়ােজন অধিক কর্মসংস্থান। ৯০ দশকের পর বাংলাদেশে একটি বিকাশমান কর্মসংস্থান হচ্ছে বিভিন্ন ব্যাংক। অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০০৬ অনুসারে বর্তমানে বাংলাদেশে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংক ৪টি, বিশেষায়িত ব্যাংক ৫টি, বেসরকারি ব্যাংক ৩০টি, বিদেশী ব্যাংক ৯টি। এই সকল ব্যাংকগুলাের মােট শাখা রয়েছে ৬৪১২টি।

বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত বর্ধনশীল হওয়ায় ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে। মুক্তবাজার অর্থনীতি প্রসারের সাথে ব্যাংকিং খাতেরও প্রসার ঘটছে যেখানে প্রতিবছর কর্মসংস্থান হচ্ছে বহু শিক্ষিত বেকার যুবকের। ব্যাংক একটি চ্যালেঞ্জিং চাকুরি। পাশাপাশি রয়েছে অধিক বেতনের নিশ্চয়তা এবং উন্নত ক্যারিয়ার গঠনের সুযােগ। প্রযুক্তি প্রসারের এই যুগে ব্যাংককে পেশা হিসেবে নিয়ে দেশ বিদেশে নিজেকে একজন চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। বিশ্বব্যাপী যতই অর্থনীতির প্রসার ঘটবে ব্যাংক খাতেরও প্রসার ঘটবে সেই অনুপাতে। সুতরাং নিজেকে বেকারত্বের হাত থেকে মুক্ত করা, দেশকে অর্থনৈতিক উন্নতিতে সাহায্য করা, উন্নত জীবন-যাপন, নিজেকে দেশ বিদেশে অর্থ ব্যবস্থাপক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ব্যাংক হতে পারে একটি অন্যতম ক্ষেত্র।

ব্যাংকে চাকরি
Career in Banking ©vikingscareerstrategists

এ সমাজে এই Profession এর প্রয়ােজনীয়তা

ব্যাংকে চাকুরি একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা, এই চ্যালেঞ্জিং পেশার মাধ্যমে সমাজকে বিভিন্ন ভাবে সেবা প্রদান করা যায়। যার মাধ্যমে সমাজে সামাজিক-অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের শক্ত ভিত তৈরি করা যায়, যা সমাজ ও দেশকে বিশ্ব দরবারে সুপরিচিতি দিতে পারে।
নিম্নলিখিত বিভিন্ন কারণে সমাজে এই পেশার প্রয়ােজনীয়তা অপরিহার্য-

  • দেশ ও সমাজকে অর্থনৈতিক মুক্তি দান ।
  • সমাজ থেকে দারিদ্রতা বিমােচন করা।
  • অর্থনৈতিকভাবে নারী-পুরুষের সমতা আনয়ন।
  • ব্যাংক প্রদত্ত ঋণের অর্থ সঠিক ও বৈধ উপায়ে ব্যবহারের মাধ্যমে সামাজিক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী ভিতের উপর প্রতিষ্ঠা করা।
  • অর্থনৈতিক মুক্তির মাধ্যমে সামাজিক বৈষম্য দূর করা।
  • দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামাে শক্তিশালীকরণ।
  • ভু-স্বামী ও জোতদারদের হাত থেকে সমাজকে মুক্ত করা।
  • ঋণ প্রদান ও তার সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে সমাজের দরিদ্র মানুষদেরকে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করা।
  • সমাজে সৎ ও যােগ্য মানুষ সৃষ্টিতে সহায়তা করা।

উপরােক্ত দৃষ্টিকোন থেকে বিচার করলে একজন ব্যাংকার সমাজ ও দেশকে সহায়তা করতে পারে বিভিন্নভাবে। প্রতিষ্ঠা করতে পারে অর্থনৈতিক সুশাসন, মুক্ত করতে পারে ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান যা দেশ ও জাতিকে দিতে পারে দারিদ্রের অভিশাপ থেকে মুক্তি। সুতরাং দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি, সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণ, সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান লাঘব, সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠা সর্বোপরি সমাজ ও দেশে সৎ ও যােগ্য ব্যক্তিত্ব প্রতিষ্ঠায় একজন ব্যাংকার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে যা বহু পেশার মানুষের দ্বারা সম্ভব নয়। তাই বলা যায় সমাজে একজন সৎ ও যােগ্য ব্যাংকারের প্রয়ােজনীয়তা অনস্বীকার্য।

ব্যাংকে চাকরি যােগ্যতা
ব্যাংকে চাকরির যােগ্যতা সমূহ ©leverageedu

এই Profession এ যাওয়ার জন্য কোন ধরনের যােগ্যতা প্রয়ােজন

ব্যাংক যেহেতু একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা সুতরাং এই পেশায় আসার পূর্বে নিজেকে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার মানসিকতার জন্ম দিতে হবে। সময়ানুবর্তিতা ও নিয়মানুবর্তিতা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে, পরিশ্রম করার মানসিকতা সৃষ্টি করতে হবে। উর্ধ্বতনদের মতামতের প্রাধান্য দেওয়া, ধৈর্য ধারণ করার ক্ষমতা ও অন্যের কাছ থেকে শেখার মানসিকতা থাকতে হবে।

প্রয়ােজনীয় যােগ্যতা ব্যাংকিংকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করার জন্য নিম্নলিখিত যােগ্যতা থাকতে হবে। যথা-

শিক্ষাগত যােগ্যতা

যে কোন স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েট হলে ব্যাংককে পেশা হিসেবে গ্রহণ করার সুযােগ থাকবে, তবে বিশেষ করে বিবিএ ও এমবিএ (হিসাব বিজ্ঞান, মার্কেটিং, ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি) ডিগ্রি থাকলে বর্তমানে ব্যাংকে চাকুরি পাওয়ার জন্য সুবিধা হয়। তবে বিশেষ কোন বিষয় উল্লেখ না থাকলে যে কোন বিষয়ে পাশ করে ব্যাংকে চাকুরির জন্য আবেদন করা যেতে পারে। বিশেষ করে সরকারি ব্যাংকগুলােতে অফিসার ও সিনিয়র অফিসার হিসেবে নিয়ােগ সকল বিষয়ের জন্য উন্মুক্ত থাকে। তবে টেকনিক্যাল পােস্টে (যেমন কম্পিউটার) নিয়ােগের জন্য নির্দিষ্ট বিষয় উল্লেখ থাকতে পারে। বেসরকারি ব্যাংকগুলােতে নিয়ােগের জন্য কমার্সের ছাত্রদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। Computer বিষয়ে ভালাে জ্ঞান থাকা অপরিহার্য। মনে রাখতে হবে বর্তমান ব্যাংকিং ব্যবস্থা Computer ভিত্তিক।

শারীরিক যোগ্যতা

সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চূড়ান্তভাবে নিয়ােগের পূর্বে শারীরিক যােগ্যতা পরিমাপের জন্য মেডিকেল বাের্ডের মুখোমুখি হতে হয়। আর এই জন্য একজন প্রার্থীকে অবশ্যই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে।

মানসিক যােগ্যতা

ব্যাংক একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যেখানে সর্বদাই আর্থিক লেনদেনের হিসাব নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। আর্থিক লেনদেনকে সঠিক ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রয়ােজন সততা ও কর্তব্য নিষ্ঠার। ব্যাংক এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে সততা, নিয়মানুবর্তিতা, সময়ানুবর্তিতা ও কর্তব্য নিষ্ঠার কোন বিকল্প নেই। আপনি যদি উল্লেখিত বিষয়গুলাে নিজের মধ্যে প্রতিষ্ঠা করতে পারেন তাহলে নিজেকে একজন ভালাে ব্যাংকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন।

নিয়ােগ পরীক্ষায় কৃতকার্য

ব্যাংকে চাকুরি পেশা হিসেবে নিতে হলে আপনাকে যােগদানের পূর্বে একটি প্রতিযােগিতামূলক লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে হবে।

লিখিত পরীক্ষা

ব্যাংক নিয়ােগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি, পরীক্ষা পরিচালনা ও খাতা মূল্যায়ন সংক্রান্ত সমূদয় কাজ মূলতঃ সম্পাদন করে থাকে আইবিএ ও বিআইবিএম। এর ফলে দেখা যায়, বিভিন্ন ব্যাংকের নিয়ােগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রের মধ্যে মৌলিক কোন পার্থক্য থাকে না। দুই অংশে বিভক্ত (MCQI Written) পরীক্ষার সময় ৩ ঘন্টা (১ ঘন্টা + ২ ঘন্টা) ও পূর্ণমান ২০০ (১০০+১০০)। তবে এটি ব্যাংক ভেদে পরিবর্তিত হতে পারে। MCQ অংশের সবকটি প্রশ্নের মধ্যে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, ইংরেজি ভাষা, গাণিতিক যুক্তি, আইকিউ, দৈনন্দিন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নে ৩৫/৪০ নম্বরের গাণিতিক বিষয় আসে। এছাড়া English Language & Communication Skill, Grammar & Composition থেকেই ৪০/৫০ নম্বরের প্রশ্ন করা হয়। অন্যান্য যে বিষয়ে প্রশ্ন আসতে পারে সেগুলাে হচ্ছে ব্যাংক সংক্রান্ত, IQ Test, Computer literacy. Data Presentation ইত্যাদি। তবে ইসলামী ব্যাংকে পরীক্ষার সময় প্রশ্ন পত্রে একটি অংশ থাকে ইসলামী বিষয়ের উপর।

মনে রাখতে হবে লিখিত পরীক্ষা মােটামুটি Standard এবং ইংরেজি বিষয়ের উপর বেশি নজর দেওয়া হয়। লিখিত পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়ার কোন নির্দিষ্ট নম্বর নেই তবে সাধারণত ৭০ শতাংশ এর উপর নম্বর পেলে কৃতকার্য হওয়া যেতে পারে। সুতরাং একটি দীর্ঘ মেয়াদী প্রচেষ্টার মাধ্যমে আপনি নিজেকে লিখিত পরীক্ষার জন্য তৈরি করে তুলতে পারেন। এ কথা স্মরণ রাখতে হবে প্রতিযােগিতামূলক পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়ার জন্য সহজ ও সােজা কোন পথ নেই। এর জন্য আপনাকে দীর্ঘ মেয়াদী এবং কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।

মৌখিক পরীক্ষা

লিখিত পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়ার পর প্রার্থীকে একটি মৌখিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে হবে। এখানে আপনাকে বিষয়ভিত্তিক, চাকুরি সংক্রান্ত, ইংরেজি এবং সাধারণ জ্ঞানের (বিশেষ করে চলমান বিশ্ব ও বাংলাদেশ প্রসঙ্গের) উপর প্রশ্ন করা হতে পারে। মনে রাখতে হবে মৌখিক পরীক্ষায় একটি পদের জন্য একাধিক পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়ে থাকেন। তাই এখান থেকেও বাদ পড়ার সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং এই ক্ষেত্রে কৃতকার্য হওয়ার জন্য নিজেকে তথ্য বহুল করে গড়ে তুলতে হবে।

ব্যাংকে চাকরি যােগ্যতা
ব্যাংকে চাকরির সুবিধা সমূহ ©leverageedu

এই পেশার সুযােগ সুবিধাসমূহ

ব্যাংক একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং এর মাধ্যমে দেশ ও সমাজকে সেবা করার যেমন সুযােগ আছে তেমনি নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার ও বিশেষ সুযােগ সুবিধা আছে। যেমন

(ক) Social Status: সমাজের সর্বশ্রেণীর মানুষের সাথে মেলামেশার সুযােগ আছে এই পেশার মাধ্যমে। যার কারণে সমাজের প্রত্যেক শ্রেণীর মানুষ একজন ব্যাংকারকে শ্রদ্ধা করে থাকেন যদি তিনি একজন সৎ ও কর্তব্য পরায়ন ব্যাংকার হয়ে থাকেন। সমাজের বিভিন্ন প্রকার নীতি নির্ধারণে একজন ব্যাংকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যা তার Social Status কে বৃদ্ধি করে থাকে।

(খ) পদোন্নতির সুযােগ: প্রত্যেক চাকুরিজীবী তার চাকুরি জীবনে পদোন্নতির আশা করে থাকে। সময়মত পদোন্নতি হলে কাজে আসে গতিশীলতা। ব্যাংকে দ্রুত পদোন্নতি পাওয়া যায় যদি আপনি নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পারেন একজন কর্মঠ, কর্তব্যপরায়ণ, সৎ ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি নিষ্ঠাবান অফিসার হিসেবে।

(গ) বেতন ভাতার সুযােগ সুবিধা: সরকারি ব্যাংকগুলােতে জাতীয় বেতনস্কেল অনুসারে বেতন প্রদান করা হয়। তবে এখানে রয়েছে ভবিষ্যৎ তহবিল সুবিধা, কর্মচারী কল্যাণ সুবিধা, যৌথ বীমা সুবিধা, মেডিক্যাল সুবিধা, বেনা ভােলেন্ড ফান্ড সুবিধা, বাসা ভাড়া সুবিধা, বােনাস সুবিধা ইত্যাদি। অন্যদিকে বেসরকারি ব্যাংকে জাতীয় বেতনস্কেলের পাশাপাশি বিভিন্ন সুযােগ সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে সঠিক হারে বেতন প্রদান করে থাকে যা এই চাকুরিতে আসার জন্য সবাইকে আকৃষ্ট করে থাকে। এখানে রয়েছে যাতায়াত ভাতার সুবিধা, বাড়ি ভাড়া সুবিধা, পিএফ সুবিধা একাধিক বােনাস সুবিধাসহ বিভিন্ন সুবিধা।

(ঘ) ঋণ পাওয়ার সুবিধা: একজন ব্যাংকার হিসেবে আপনি আপনার ব্যাংক থেকে TIP CEICT House building loan, Car loan, Motor cycle loan, Marriage loan, Computer loan, সহ অন্যান্য loan পেতে পারেন যা অন্য কোন চাকুরি থেকে ব্যাংক রেটে পাওয়া সম্ভব নয়। এই Loan পরিশােধ করাও আপনার জন্য সুবিধা। কারণ বেতন থেকে তা কর্তনের মাধ্যমে Adjust করা হয়।

(ঙ) প্রশিক্ষণ সুবিধা: ব্যাংকে চাকুরি করার সুবাদে আপনি আপনার চাকুরি জীবনে Basic Training থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারবেন যা আপনাকে একজন সঠিক Professional person হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করবে। অধিকতর যােগ্যতার পরিচয় দিতে পারলে আপনি বিদেশেও প্রশিক্ষণের সুযােগ পেতে পারেন। ব্যাংক যেহেতু একটি টেকনিক্যাল পেশা সেহেতু এখানে প্রশিক্ষণের সুবিধা অনেক।

জনসেবার সুযােগ

মানুষের বেশিরভাগ পার্থিব কর্মকান্ডের মূলে রয়েছে অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে ব্যাংক জনসাধারণকে নিয়ে কাজ করে থাকে। তাই একজন ব্যাংকার হিসেবে অন্য যে কোন পেশার চেয়ে সমাজকে সেবা করার সুযােগ অনেক বেশি। নিম্নলিখিতভাবে আপনি ব্যাংকার হিসেবে সমাজকে সেবা করতে পারেন। যথা :

(ক) Micro Credit এর মাধ্যমে গ্রামীণ দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাহায্য করা।

(খ) ব্যাংকের অর্থ ঋণ গ্রহীতাকে প্রদান ও তা সঠিক তদারকীর মাধ্যমে শিল্প ও ব্যবসা সামাজিক স্থিতিশীলতা অর্জনে সহায়তা দান করা।

(গ) একজন সৎ কর্তব্যপরায়ণ নিয়মানুবর্তী, সহযােগী ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তি হিসেবে বাণিজ্যের উন্নয়নে সাহায্য করা।

(ঘ) মানুষের কাছে পড়ে থাকা অলস অর্থ সংগ্রহের মাধ্যমে এবং তা ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে সমাজের অন্যান্য ব্যক্তিদেরকে এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে যা দেশ ও জাতির জন্য বড়ই প্রয়ােজন।

ব্যাংকে চাকরির (Bank Jobs) প্রস্তুতিসুবিধা
Source: Career in Banking Sector (wallstreetmojo.com)

কিভাবে প্রস্তুতি নিবেন

অধিক জনসংখ্যায় ভরপুর এবং বেকারত্বের অভিশাপ যুক্ত এই দেশে চাকুরি একটি সােনার হরিণ। এই সােনার হরিণকে বাগে পাওয়ার জন্য প্রয়ােজন কঠোর পরিশ্রমের। প্রতিবছর হাজার হাজার ছেলেমেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পার হয়ে প্রবেশ করছে চাকুরি বাজারে। সেইভাবে সৃষ্টি হচ্ছে না কর্মসংস্থানের। লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত বেকার যুবকের সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মাধ্যমে আপনাকে ধরতে হবে চাকুরি নামের সােনার হরিণটি। নিম্নলিখিতভাবে প্রস্তুতি নিলে একজন ব্যাংকার হিসেবে চাকুরি নামের সােনার হরিণটি ধরা গেলেও যেতে পারে। আর এ জন্য দরকার-

(ক) বিষয়ভিত্তিক পড়া লেখা সঠিকভাবে পরিচালনা করা।

(খ) ইংরেজি শিখার উপর জোর দেওয়া এবং প্রতিদিন তা চর্চা করা।

(গ) সাধারণ জ্ঞান শেখার পাশাপাশি আই কিউ বৃদ্ধি করা।

(ঘ) নিয়মিত পত্রিকা পাঠ এবং তা থেকে প্রয়ােজনীয় তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে নথিভূক্ত করা।

(ঙ) Time table & life table প্রণয়নের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করা।

(চ) দৈনন্দিন বিজ্ঞান, গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা বৃদ্ধিতে জোর দেওয়া, (গাণিতিক যুক্তির জন্য ৯ম/১০ম শ্রেণীর পাটিগনিত, বীজগনিত, জ্যামিতি ও অংশিদ্বারিত্বের অংক বেশি চর্চা করা)

(ছ) বেশি বেশি প্রতিযােগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা (এই ক্ষেত্রে কোন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি কিংবা বাজার থেকে প্রশ্নব্যাংক বই কিনে তা চর্চা করা)।

(জ) ইসলামী জ্ঞান চর্চা করা।

(ঋ) কম্পিউটার এর উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ এবং কম্পিউটার সম্পর্কে জ্ঞান বৃদ্ধি করা।

(ঞ) গ্রুপ ভিত্তিক পড়া লেখা করা।

(ট) বেশি বেশি লেখার অভ্যাস করা।

(ঠ) সর্বোপরি নিজেকে প্রতিযােগিতামূলক পরীক্ষার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করে তোলা।

(ড) সময় ও সুযােগ থাকলে বিবিএ অথবা এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করা।

পরিশেষে বলা যায়,
সার্বিকভাবে বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবস্থা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় বিশ্বব্যাপী ব্যবসা যেভাবে প্রতিযােগিতার সম্মুখীন এবং ঝুকিপূর্ণ ব্যবসায় পরিণত হয়েছে সেখানে বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবসা এখন আর পূর্বের মত সহজ নয়। নতুন নতুন কৌশলের বহুমাত্রিক ব্যবহার এখন ব্যাংকিং ব্যবসায় এসে পড়েছে। প্রযুক্তির ব্যবহারের সাথে সাথে ম্যানেজমেন্ট টেকনিক ও প্রােডাক্ট ডিজাইনারের প্রতিযােগিতা চলছে। এখন ব্যাংক মানে প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানাে ছাপানাে কাগজের নির্দেশাবলী নয়। এখন ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে গ্রাহকের বন্ধু হয়ে যেতে হয়। যার মাধ্যমে ঋণদাতা ও ঋণগ্রহীতা এবং আমানতকারী সকলেই উপস্থিত হন। সুতরাং নিজেকে চ্যালেঞ্জ গ্রহণকারী এবং তথ্য প্রযুক্তির যুগের উপযােগী হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে একজন সফল ব্যাংকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করা সম্ভব এবং এর মাধ্যমে দেশ ও জাতিকে অর্থনৈতিক মুক্তি আনয়নে সাহায্য করা সম্ভব।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *