দীপু নাম্বার টু | শৈশবের ভালোবাসার সিনেমা

দীপু-নাম্বার-টু-১৯৯৬

মুভি তো প্রায় সবাই দেখে, কয়েকদিন মনে থাকে, এরপর ভুলে যায়। কিন্তু কিছু আছে ব্যতিক্রম, যেগুলো শুধু দেখেই শেষ হয়ে যায় না, একেবারে মনে গেঁথে থাকে। হাজার চেষ্টা করেও মুভি গুলোকে নিজের পছন্দের তালিকা থেকে বিতাড়ন করা অসম্ভব হয়। ঠিক ওইরকম একটা মুভি নিয়ে আজ কিছু লিখতে বসলাম।
আজ আমি নিজের সবচেয়ে প্রিয় বাংলা সিনেমাটি নিয়ে কয়েকটি লাইন সবাইকে মনে করিয়ে নস্টালজিক করে দেওয়ার চেষ্টা করবো।

আচ্ছা ধরুন কেউ আপনাকে প্রশ্ন করে বসলো,”আপনার প্রিয় সিনেমা কোনটি?”
এখন আপনার মাথায় নিশ্চয়ই খুব সম্ভবত হলিউড কিংবা বলিউড এর কোন একটা সিনেমার এসে উঁকিঝুঁকি দেবে। কিন্তু যদি এই প্রশ্নটা নব্বই দশকের কোন ছেলেমেয়েকে তার কিশোর বয়সে জিজ্ঞেস করা হতো তাহলে একটা মুভির নাম সবার প্রথমে আসতো আর সেটা হলো…….
“দীপু নাম্বার টু”

একথা নিঃসন্দেহে সত্যি যে, নব্বই দশক অথবা তার কাছাকাছি সময়ে যাদের জন্ম তাদের কাছে এই সিনেমাটি অন্যরকম এক ভাল লাগা ও গুরুত্ব বহন করে। তৎকালীন সময়ের শিশু-কিশোর অথবা বড়রাও এই মুভির সাথে নিজেদের বেশ কানেক্ট করে নিতে পেরেছিল।
“দীপু নাম্বার টু” নামটি কোথাও দেখলে অথবা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে দীপু ও তারেক নামের দুই কিশোরের বন্ধুত্বের ও দু:সাহসিক অভিযানের গল্প। এই মুভি দেখার সময় নিজেকে দীপু হিসেবে কল্পনা করেনি এমন কিশোর পাওয়া অসম্ভব। আর যাদের বাবা সরকারী চাকরিজীবী ছিলেন তাদের কাছে তো এই সিনেমার গল্প অনেকটা নিজের আপন ও পরিচিত গল্প।

আমার এই বয়সে এসেও কেউ প্রিয় সিনেমার নাম জিজ্ঞাসা করলেই “দীপু নাম্বার ২” এর কথা মনে পড়ে। আর বিটিভিতে এই সিনেমা সম্প্রচার করা মানেই ছিল ঐদিন সব কাজ-কর্ম ফেলে সিনেমাটি দেখতে বসে যাওয়া ছিল রেগুলার রুটিন।
জনপ্রিয় লেখক মুহাম্মদ জাফর ইকবালের উপন্যাস অবলম্বনে মোরশেদুল ইসলাম এর পরিচালনায় ১৯৯৬ সালে সরকারী অনুদানে সিনেমাটি নির্মিত হয়।

দীপু নাম্বার টু চলচ্চিত্রের দৃশ্য
দীপু নাম্বার টু চলচ্চিত্রের দৃশ্য; ©Monon Cholocchitro

কাহিনী সংক্ষেপঃ
গল্পটা মূলত দীপু নামের একটা কিশোরের। দীপুর বাবা সরকারী চাকরিজীবী। পরিবারে সদস্য বলতে বাবা ও ছেলে দুজন। চাকরীর সুবাদে উনাকে প্রতি বছরই বদলী হয়ে নতুন জায়গায় যেতে হয়। ফলাফল, দীপুকেও প্রতিবছর বদলাতে হয় তার স্কুল, বন্ধু এবং আশেপাশের চেনা পরিবেশ। তেমনি বাবা ট্রান্সফার হওয়ার কারনে নতুন এক স্কুলে ভর্তি হয় দীপু। রোল কল করার সময় দেখা যায় ওই ক্লাসে দীপু নামে একজন অলরেডি আছে তাই টিচার আমাদের গল্পের দীপুকে দীপু নাম্বার টু নামকরণ করলেন।
এই স্কুলে তার দেখা হয় ডানপিটে স্বভাবের কিশোর তারিকের সাথে। তারিকের সাথে দীপুর প্রথমে দ্বন্দ্ব এরপর বন্ধুত্বের ঘটনা ও অসাধারণ ঘটনার সমন্বয়ে সিনেমার গল্প সাজানো হয়েছে। ঘটনা ক্রমে তারা এক রোমাঞ্চকর ঘটনায় নিজেদের জড়িয়ে ফেলে যা রাষ্ট্রীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট।

দীপু নাম্বার টুয়ের অরুণ সাহা (দীপু) ও শুভাশিষ (তারিক)
দীপু নাম্বার টুয়ের অরুণ সাহা (দীপু) ও শুভাশিষ (তারিক); ©: prothom-alo.com

তৎকালীন সময়ের বাংলা সিনেমায় গরীব-ধনীর প্রেমের গতানুগতিক গল্পের ভীড়ে “দীপু নাম্বার টু” কিশোরদের মনে প্রশান্তি দেয়ার গল্প ছিল। এই সিনেমায় একাধারে প্রকাশ পেয়েছে বন্ধুত্ব , ভালোবাসা, ত্যাগ, সাহসিকতা এবং রোমাঞ্চকর গল্প। অনুধাবনমূলক ও শিক্ষণীয় অনেক ব্যাপারও ছিল সিনেমাটিতে। মায়ের প্রতি দীপুর টান আর বাবার প্রতি ভালোবাসা এককথায় অসাধারণ আবহ তৈরি করেছিল।

আরেকটি অন্যরকম ব্যাপার হলো, এই চলচ্চিত্রে কোন গান নেই তবে চমৎকার আবহসংগীত রয়েছে। যারা এই মাস্টারপিসটি এখনো দেখেননি (বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের দর্শকরা) তারা দেখে ফেলুন অবিলম্বে আর ফিল করুন বাংলা সিনেমার স্বর্ণালী অধ্যায়ের এক অপূর্বদৃষ্টি।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *