হয় না

হয় না

চাইরকোণা একটা সাদা লাম্বা জমিন,
এদিক ঐদিক নীল আর ছাইরঙা টান।
মাঝখানে কথা-লেখা সাদা কালো হরফ;
নিচে তিনটা ফোঁটা- কী রাইত কী দিন
উথালপাতাল করে। মনডারে আনচান
করায়া দিয়া, হুঁট কইরা হয়া যায় অফ।

ম্যালাদিন হয় তোমারে শেষ দেখসিলাম।
তোমার মায়ের হাতের রান্না খাওয়াইবা
কইসিলা সেই ভাদ্দরি পুন্নিমার পরদিন।
মাথার উপ্রে সুরুজ, গরমের নাই লাগাম।
বাড়িডা তোমগো খালি, এই কথা ভাইবা
নিয়া গেলা। উঠানে আছিল রুহুলামিন।

সেই শ্যাষ। বাপের মুখে জম্মের চুনকালি
মাখনের দায়ে তোমার বিয়া হইয়া গেল।
রুহুলামিনডাও তো পাড়ি জমাইল বিদেশে।
ছ্যাদা হইল আমার কইলজাডাই খালি।
তুমি গেলা গা শহরে। জামাইয়ের রেল
কোর্টারে বাসা তোমার, হাইয়েস্কুলের পাশে।

দেখসো কারবার! সাত মাসে ঘইটা গেল কত কী?
আমার চারকি হইল একই শহরে। ফায়ার অফিশে।
তোমার কোর্টারের বাসাটা আমি চিনি না যদিও,
তবু খুঁজি হুদাই। ভাইগ্যের টান কোনমতে যদি
একদিনও তোমারে আঁতকা জানালার পাশে
আইনা খাড়া করায়, আর রাস্তায় থাকি আমিও!

সারাদিন অফিশ করি। তোমার খোঁজ লাগাই সন্ধ্যায়।
জর্দামারা পান না চাবাইলে দুপুরে ঝিমানি আহে খুব।
পর্তিদিন মাইঝ রাইতে ঘরে ফিরি তোমার খবর ছাড়া।
পরদিন বিয়ানে আবার বাইর হই, পামু না জাইনাও
টোকাই। আর তুমিও, মাইরা আছ কেমুন এক ডুব?
দেখলা না আমারে একটাদিন, ইস্কুলের সামনে খাড়া।

বাসাডা চিনলে জানালায় একটা ইঁটা মাইরা
হইলেও তোমারে ডাকতাম। শুধু এক নজর
দেইখাই চইলা আসতাম। কোনোদিন আর
ফিরতাম না ওইদিকে। এক্কেবারে ছাইড়া
চইলা যাইতাম এই এলাকা… না, পুরা শহর।
শুধু যদি জানতাম তুমি আছ ভালো, আবার।

কপাল! সেইদিন তুমিই বসলা আমার
সামনের সিটে। দেইখা চিনি নাই প্রথমে।
আর এতকিছু দেখাও তো হয় না গাড়ি
চলনের সময়। যখন তুমি নাইমা যাওয়ার
লেইগা হেল্পাররে কইলা থামাইতে বামে,
আমার দিলের ভিত্রে লাগসিল একটা বাড়ি।

শইলডার কাঁপন অপ্ল একটু কইমা আইলে
তাগদা কইরা ভাঙতি ছাড়া ভাড়াডা দিয়াই
আমিও নাইমা গেলাম তোমার পরে পরে।
কন্টেক্টর ততক্ষণে অবইশ্য বাসের শইলে
দুইবার থাবড়ায় দিসিল। চালু বাস থিকাই
নামনে অবাক হইয়া তাকাইলা, মনে পড়ে?

বাঁও ঠ্যাংডা কি দৌড় দেওনের লাইগা
একটু কাঁইপা উঠসিল তোমার? নাকি
মাথাডা ঘুরায়া পইড়া যাইতে নিসিলা?
নতুন ফেসবুক আইডিডা দিয়াই ভাইগা
গেলা।… প্রথমদিনেই, আমি যেন দূরে থাকি
তোমার থেইকা- কইয়া মেসেজ দিলা।

আরে, ক্যামনে বুঝাই তুমি ভালো আছ,
এইডা জানলে আমার আর কিচ্ছু লাগব
না? চৈত মাসের বৃষ্টির মতন আমিও হারায়া
যাব কোনোখানে। লাগলে তরকারি-মাছ
বেচব, নাইলে মাটি কাইটা হইলেও খাব।
কিন্তু কেমন আছ এইটা দাও খালি জানায়া।

বিছানায় শুইয়া মোবাইলডার দিকে চায়া
থাকি ঘণ্টার পর ঘণ্টা। টুক-টুক্কুর আওয়াজ
কইরা নিচের দিকে তিনটা ফোঁটা উঠে ভাইসা।
না জানি কত কথা বুকে রাখস তুমি লুকায়া!
সেইগুলার কী জবাব দিমু, ক্যামনে দিমু ভাঁজ-
সব কথার উপ্রে- চিন্তা জমে মাথায় আইসা।

“kmn aso” এর জবাবে সেই যে কইলা
“আমাকে এইভাবে ফলো কইরেন না,”
এরপরে আমার আর কী কওয়ার থাকে?
আবার জিগাইলাম ঐ কথা টাইপ কইরা।
তারপর থেইকা আর কিছুই না লেইখা
ঘুরতেস খালি আসা আর যাওয়ার পাকে।

পুরাডা সময় তাকায়া ছিলাম আমার মোবাইলে।
তুমি কিছু একটা লেখ, আবার কাইটা দাও;
একটুখানি জিরায়া আবার শুরু কর লেখা।
ততক্ষণে আমি জানি কী বলব জবাবটা পাইলে-
“সুখে থাইক, বাকি জীবনডা খুশিতে কাটাও,”
এইটা বইলা বিদায় জানাব, চিরদিনের লেইগা।

“আকবর ভাই, আপনে আর এইদিকে আইসেন না।
ও আমারে এমনেই সন্দেহ করে। আপাতত এইটাই
বললাম। আর মেসেজও দিয়েন না। ফেইক আইডি
থেইকা মেসেজ দিসি। এইটার কথা কেউ জানে না।”
“আর, আপনেরে ইস্কুলের সামনে দেইখাও যাই নাই
কোনোদিন। ডর লাগে। কীয়ের ডর, বুঝি না এইডি।”

আমি এইটা লেখতে লেখতে হয়তো ব্লক দিস আমারে,
নাইলে অন্তত ডিকটিব করস নিজের আইডিটা।
নিষেধ মাইনা তোমারে আর মেসেজ দিলাম না।
পাবলিকে পোস্ট কইরাই আমি জানাইলাম সবারে,
আইজ থেইকা পর্তিদিন দোয়া করুম- জীবনডা
তোমার সুখে কাটুক। আমারে আর দেখবা না।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *