লর্ড অব দ্য ফ্লাইজ (Lord of the Flies) , যে বই মানুষকে বিশ্লেষণ করে

lord of the flies 
যদি বলি এমন একটা উপন্যাস আছে যেটাতে আপনি মানব চরিত্রের প্রকৃত পরিচয়ের একটা রিফ্লেকশন পেয়ে যেতে পারেন তাহলে নিশ্চয়ই একটু নড়েচড়ে বসবেন। আজ তেমন একটা উপন্যাস নিয়েই একটু লেখার চেষ্টা করলাম।

Lord of the Flies (1954)

By William Golding.

একদল কিশোর বিমান দূর্ঘটনার শিকার হয়ে এক অজানা এক দ্বীপে আটকা পড়ে, আর ওই দূর্ঘটনায় প্লেনে থাকা বয়স্কদের সবাই মারা যায়। ওই কিশোরদের মধ্যে রাল্ফ নামে শক্ত-সামর্থ্য একটা ছেলে বেঁচে যাওয়া সবাইকে একত্র করে একটা নিয়মতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করার উদ্যোগ নেয়। এই কাজে তাকে হেল্প করে পিগি নামে হাঁপানিরোগে আক্রান্ত মোটাসোটা আরেকটা ছেলে।
রাল্ফ খুব কম ব্যবধানে ছেলেদের নেতা নির্বাচিত হয়, ওই নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী জ্যাক নির্বাচিত হয় শিকারীদের নেতা হিসেবে। এরপর থেকে শুরু হয় উপন্যাসের মূল কাহিনী, যেখানে শান্তিপূর্ণ একটা পরিস্থিতি বদলাতে বদলাতে রক্তক্ষয়ী রূপ নিয়ে নেয়।
আমি এখন পর্যন্ত বেশ কিছু মুভি দেখেছি আর বইও পড়েছি এইরকম দ্বীপে সারভাইভাল নিয়ে কিন্তু এই বইটা নিঃসন্দেহে অন্য সবগুলোর চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকবে।
এই উপন্যাসটা অন্য কোনো সাধারণ থ্রিলারের মতো না। এটা আমাদের সবার গল্প, মানুষের গল্প।বইটির কাহিনী যত এগিয়ে যায় মানবচরিত্রের প্রকৃত রূপ ততই পরিস্কার হয়ে ধরা পড়তে থাকে।
আসলে আমাদের মূল চেতনা, সত্বা যাই বলেন, সেটা হলো নৃশংসতা। আমরা যে এই নির্দয়া ধরণীতে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি, এর কারন আমরা সবচেয়ে বুদ্ধিমান বা প্রতিকূল পরিবেশে আমরা সবচেয়ে ভাল অভিযোজন করতে পারি, সেইটা না। আমরা এই দুনিয়াটাকে দখল করতে পেরেছি কারণ যে জঙ্গল থেকে আমরা উঠে এসেছি, সেইখানে আমাদের থেকে বড় নির্দয় আর নির্মম খুনি আর কেউ ছিলো না।হাজার বছরের ইতিহাস সেটাই প্রমাণ করে। গোটা উপন্যাসটি নির্মিত হয়েছে মানুষের অন্তর্গত পশুত্বকে চিহ্নিত করে। আমরা আসলে সভ্যতার মুখোশ পরে আছি। কোনভাবে এই মুখোশটা সরে গেলেই আমাদের ভেতরের সেই হিংস্র সত্বাটা বের হয়ে পড়ে।
বইয়ের প্রতিটা চরিত্র আমাদের মানসিকতার বহিঃপ্রকাশক। কয়েকটা চরিত্রের বর্ণনা সংক্ষেপে দেওয়ার চেষ্টা করছি-
১.রাল্ফ- দেখতে সবচেয়ে সামর্থ্যবান হওয়া সত্বেও অত্যন্ত ভালো সৎ ও যোগ্য নেতা। সে চায় যাতে সবাই নিয়ম মেনে চলে, কেউ অন্যায় কিছু না করে। যে কাজ সে নিজে পছন্দ করে না সেটাও সে করে শুধুমাত্র দলের সবার উপকারের স্বার্থে।
উপন্যাসে সে আইন, সভ্যতা, নিয়মতান্ত্রিকতার প্রতিনিধি।
২.পিগি- দলের সবচেয়ে মেধাবী কিন্তু রোগাক্রান্ত ও স্থুলকায় হওয়ায় সে বড়দের মধ্যে সবচেয়ে দূর্বল। পিগি তার আসল নাম নয়, এটা বলে তাকে ক্ষেপানো হতো। সেও রাল্ফের মতো সভ্যতা ও আইনের শাসনে বিশ্বাসী। অনেক পড়াশোনা করার কারণে বেশ যুক্তিবাদী চিন্তাধারা বহন করে। দলের বেশিরভাগ ছেলে তাকে নিয়ে মজা করে তার বেশি জ্ঞানমূলক কথাবার্তার জন্য।
উপন্যাসে সে বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদের প্রতিনিধিত্ব করে।
৩.জ্যাক- শিকারী দলের নেতা জ্যাক ক্ষমতা ভালোবাসে, অন্যদের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সে আইন এর কথা বলে শুধুমাত্র শাস্তি দেওয়ার আনন্দ পাওয়ার জন্য। জ্যাক শিকার করতে ভালোবাসে শুধু নিজের কর্তৃত্ব জাহির করার জন্য। সে রাল্ফকে ব্যর্থতার দায়ে অভিযুক্ত করে নিজে লিডারশীপ পাওয়ার লোভে।
উপন্যাসের জ্যাক মানুষের ক্ষমতার লোভ, কর্তৃত্ববাদী মনোভাব, বর্বরতার প্রতিনিধিত্ব করে।
৪.সাইমন- কল্পনাপ্রবণ অসাধারণ একটা চরিত্র। সে প্রকৃতিপ্রেমিক, আবার দলের সবার প্রতি সহানুভূতিশীল। সাইমনই একমাত্র আসল পশুটাকে দেখতে পেয়েছিলো এবং এই দেখাই তার জন্য কাল হয়েছে।
উপন্যাসের সাইমন আমাদের মধ্যেকার আধ্যাত্মিকতা, প্রকৃতিপ্রেমের প্রতিনিধি।
এই বইয়ে অনেক বিষয় প্রতীকী রূপে আবির্ভূত হয়েছে যেগুলো খুব সহজেই ধরা যায় তাই ওইসব নিয়ে কিছু বললাম না।
640 null.William Golding 1
William Golding (1911-1993) source: Faber & Faber
এই বইয়ের লেখক ১৯৮৩ সালে সাহিত্যে নোবেলজয়ী উইলিয়াম গোল্ডিং অক্সফোর্ডে বিজ্ঞানে ভর্তি হয়ে পরে সাহিত্য বেছে নেন। তিনি নিজে ২য় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেওয়ার ফলে যুদ্ধের ভয়াবহতা একেবারে কাছে থেকে দেখেছেন। ওই অভিজ্ঞতা এই বইয়ে ভালো ভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন। এটাই তার প্রথম উপন্যাস আর এই উপন্যাস অলরেডি মর্ডান ক্লাসিক হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে।
Book Details:
পূর্ণনাম: Lord of the Flies.
প্রকাশ: ১৯৫৪,ইংল্যান্ড।
সাহিত্য পিরিয়ড: মহাযুদ্ধ পরবর্তী সাহিত্য।
জনরা: রূপক উপন্যাস।
প্লট সেটিং: নিওক্লিয়ার যুদ্ধ চলাকালীন সময়ের একটা নির্জন দ্বীপ।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *