শবনম
-সৈয়দ মুজতবা আলী
“শবনম” সম্পর্কে সাহিত্য সমালোচক অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেছেন, “বাঙ্গালী তরুণ-তরুণীদের প্রেমে পড়ার পূর্বে অবশ্যই সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘শবনম’ উপন্যাসটি পড়ে নেয়া উচিত। এমন শিক্ষণীয় প্রেমের উপন্যাস বিশ্ব সাহিত্যে আর একটিও নেই।”
নিজে পড়ার পর আমারও অনুভূতি একই,
ভালোবাসা যে এতোটা মধুর একই সাথে বেদনাবিধুর হতে পারে তা এই বই পড়েই বুঝে ফেলা যায়।
শবনমের বলা প্রতিটা কথা যেনো সুরের ঝংকার তুলে আমার হৃদয়ে প্রতিধ্বনিত হয়েছে। এতো সুন্দর সুন্দর সব সংলাপ আর ক্ষণে ক্ষণে কাব্যের ফুলঝুরি আমায় মোহিত করে রেখেছিল পুরোটা সময়।
বইটি পড়ে শবনমের প্রেমে না পড়লে আপনি নিঃসন্দেহে এক আশ্চর্য মানব।
কারো প্রেমে মশগুল হতে আসলে কী লাগে?
সুন্দর চেহারা নাকি শরীর?
এগুলো হয়তো কিছুদিন আপনাকে মোহে রাখবে কিন্তু যদি মনের সৌন্দর্য না খুঁজে পান তাহলে প্রকৃত প্রেমরূপ আপনি কখনোই দেখবেন না।
এই শবনম হাসাতে পারে, প্রশ্ন করে চিন্তায় ফেলতে পারে, দেশ বিদেশের গল্প করতে পারে, নীরবে কাঁদাতেও পারে। কারো সুন্দর চেহারার প্রতি মোহ ছুটতে খুব একটা সময় লাগে না। কিন্তু একজন সুন্দর হৃদয়ের অধিকারী মানুষ একটা ভালো বইয়ের মত, কখনো পুরনো হয় না। শবনমের বর্ণনা লেখক যেভাবে দিয়েছেন সে অনুসারে শবনম অপরূপ সুন্দরী এর পাশাপাশি তার গুণেরও শেষ নেই। গল্পের নায়ক হয়তো তার বাহ্যিক সৌন্দর্য দেখেই প্রথম আকৃষ্ট হয়েছিলেন কিন্তু প্রেমটা হয়েছে শবনমের অসাধারণ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণে।
ভালবাসা বুঝতে হলে, ভালো কীভাবে বাসতে হয় তা শিখতে হলে, ‘শবনম’ পড়তে হবে। ভালবাসা, বিরহের এক অনন্য গল্প এই ‘শবনম’।
গল্পের প্রথম দিকের সংলাপ “আমার বিরহে তুমি অভ্যস্ত হয়ে যেওনা”
থেকে শেষ দিকের সংলাপ
“আমার মিলনে তুমি অভ্যস্ত হয়ে যেওনা” পর্যন্ত যে অপূর্ব সুন্দর একটা প্রেমের আখ্যান রচিত হয়েছে তাতে যে-কারো ভালোবাসার প্রতি মনোভাব পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে।
শবনমের শেষ দুটি মাত্র কথা “বাড়িতে থেকো। আমি ফিরবো”, যেকোনো মনোযোগী পাঠকের মনে এক অদ্ভুত অনুভূতি সঞ্চার করবে, যা পাঠককে রীতিমতো ভাবের স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে, কষ্টের লোনাজলে অবগাহন করতে শেখাবে, ধৈর্য ও সহ্যের সীমা-পরিসীমাকে ব্যাপ্ত করতে শেখাবে।
‘শবনম’ আসলে একটা রহস্য।
গল্পের শেষ হয়ে যায় তবুও রহস্যের দোলাচল থামে না, ক্রমশ রহস্যের বানে ভাসতে থাকে প্রতিটি অক্ষর। সে রহস্যের কেবল শুরু আছে, শেষ নেই, রেশ আছে কেবল। তবে উপন্যাসটি বিভিন্ন ভাষায় কিছুটা দুর্বোধ্য অসংখ্য সব পঙক্তি দিয়ে থরে থরে সাজানো থাকায় অনেকেই কিঞ্চিত মনোযোগ হারাতে পারেন।
এই কাহিনীর শেষ লিখে যাননি লেখক,
হয়তো আমাদের জন্যেই তুলে রেখেছেন।
আমরা যে যার মতো করে নিজের মনেই লিখে যাই শেষটা,
হয়তো কেউ শবনমকে হারিয়ে চোখের জলে অথবা কেউ শবনমকে ফিরিয়ে এনে হাসির ছলে আজও লিখে যায় এর সমাপ্তি গাঁথা।
যতই ভাবি একটা প্রশ্নই বারবার ফিরে আসে, “শবনম কি ফিরে আসবে না? তার তো আসার কথা ছিল!”
অন্যদিকে “শবনম” আসলেই একটা পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস কিনা তা নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা আছে কিন্তু বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এই উপাখ্যানটির উপযোগিতা নিয়ে কারো কোনো সংশয় নেই।