তুমি (ছোটগল্প)

you

আমার “তুমি” টা বড্ড এলোমেলো…..কেমন জানি খাপছাড়া গোছের মানুষ।
হুমায়ুন স্যার হলে হয়তো তাকে নিয়ে হিমু ২ লিখে ফেলতেন।
জেগেও তার চোখ গুলো যেনো ঘুমিয়ে থাকে।
মাঝে মাঝে তাই তাকে জিজ্ঞেস করি মনে মনে, “কোন নেশায় পেয়েছে আবার তোমায়.. হুম?”
হাসির ছলেই যেনো অনেক শত অভিমান আর দুঃখ গোপন করে ফেলে।
আজব এক মানুষ! নিজের আবেগ গুলো প্রকাশ করবেই না তার মতে তার কোন আবেগ থাকতেও পারবে না।
এ আবার কেমন খামখেয়ালী কথা?
ইচ্ছে করে তাকে একটু ছুঁয়ে দেখি সে আসলেই মানুষ কিনা!!
তবে এই ইচ্ছেটাও বাতিল করে দেই, কেননা তীব্র বাতাসে তার চুল এলোমেলো হতে দেখেছি অনেক, আবার চিন্তিত অবস্থায়ও তার ঝরঝরে মোলায়েম চুলে তাকে হাত বোলাতে দেখেছি বেশকয়েক বার।
যদিও প্রতিবারই ইচ্ছে হতো একটু করে ছুঁয়ে দেই! কিন্তু ভয় হতো কি না কী ভেবে বসে আবার!
কিংবা যদি আমার ভালোবাসা প্রকাশ পেয়ে যায়!

মেয়েমানুষ ভালোবাসার প্রকাশ আগেভাগে করতে পারে না এই তত্ত্বের আবিষ্কারকের নাম আমি জানি না। তবে আমি এই তত্ত্বের অনুসারী হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করি না এমন না.. ব্যপারটা এমন যে, তার কাছে ভালোবাসার প্রকাশ করা মাত্রই সে ছুটে পালিয়ে যাবে, এমন একটা ভয় আমায় আগলে রাখে।
সে অনেকটা মুঠো করে ধরে রাখা বালুর মতো।
যত শক্ত করতে থাকবো মুঠো সে ততদ্রুতই আঙ্গুলের ফাঁক গলে পড়ে যেতে থাকবে হাত থেকে..
তাই তাকে কাছে গিয়ে শক্ত করে ধরবার চাইতে দূর থেকে নিজের মতো করেই ভালোবাসাকে বেছে নিয়েছি।

সে যাইহোক!
হঠাৎ একদিন তাকে সারপ্রাইজ দিয়ে দেখা করার জন্য তার প্রিয় চা খাওয়ার টঙের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।
তার নামের সাথেই মিল করে নীল রঙা শাড়ি-চুড়ি পরে নিলাম।
পথে দিয়ে যতই যাচ্ছি চারপাশে তাকিয়ে দেখছি সবাই-ই হাসিখুশি, সবাই-ই যেন নীল রঙে সেজে আছে!
এই শহরের রাস্তায়ও হঠাৎ করে যেনো ভিড়, গাড়ির বিরক্তিকর হর্ণ, গাড়ির সংখ্যা সবই একবারেই কমে গেছে!!
কি অদ্ভুত! ভাবলাম হয়তো কোন উৎসব চলছে আর আমি হয়তো বরাবরের মতোই ভুলে গিয়েছি।
রিক্সা থেকে নেমে খেয়াল করলাম রিক্সাওয়ালা মামা ও হাসছে উনিও একটা পরিষ্কার নীল পাঞ্জাবি পরে আছেন।
আমার তো এইবার রীতিমতো সন্দেহই হলো ইনি আসলেই রিক্সা চালান? আর চারপাশে হচ্ছে টা কি?
উনাকে ভাড়া দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলাম, “মামা আপনারা এতো খুশি কেনো? আর সবাই-ই নীল রঙে ঘুরছেন কেন? বলবেন?”
উনি কিছু না বলে হাসি দিয়ে চলে গেলো।
কেনো জানি তখন নিজেকে বড় বোকা বোকা লাগলো। এমন দিনেই সারপ্রাইজ দিতে এলাম যেদিন সবাই-ই নীল পরে ঘুরছে..
সে আমাকে দেখবে তো? বা দেখলেও চিনবে তো!
হেঁটে হেঁটে সেই টঙ এর কাছে যাওয়ার আগেই আকাশ অন্ধকার করে বৃষ্টি এলো।
এমন বৃষ্টি আর বাতাসে তাকে খুজতে এসেছি দেখলে সে নিশ্চয়ই অনেক বিরক্ত হবে, এই ভাবতে ভাবতে টঙ এর কাছে গিয়ে দেখি দোকানদার মামা আজ দোকানই খুলেন নি.. হয়তো উনিও নীল পাঞ্জাবি পরে কোথাও ঘুরতে চলে গেছেন!
আমি কি করবো খুঁজে না পেয়ে ভাবি হয়তো বৃষ্টি টা থেমে গেলেই মামা এসে দোকান খুলবেন,
তারও হয়তো ঘুম ভাঙবে এরপরে সে হয়তো আসবে।
এসে বলবে, “এই বৃষ্টির মধ্যে এইভাবে ভিজবার কি দরকার ছিল?”
এই আশায় অপেক্ষা করতে থাকি…
এর মধ্যে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে বিকেল পেরিয়ে একফালি চাঁদ উঁকি দেয়, সেটা কৃষ্ণপক্ষের নাকি শুক্লপক্ষ এর কে জানে! এতো ভাবতে পারছি না আর সেটা ভাবাও আমার দায়িত্ব না।
কিন্তু সে আসছে না কেনো? তার কি ঘুমই ভাঙ্গেনি?
নাকি সেও তার প্রিয়তমার সাথে নীল পাঞ্জাবি পরে দেখা করতে গেলো?

হঠাৎই তখন একটু দূরে কোথাও খুব জোরে বজ্রপাত হয়।
সেই শব্দে ঘুম ভাঙ্গে।
জানালার পাশে বসে বৃষ্টি দেখতে দেখতে কখন ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম জানি না।
কিন্তু ব্যপার টা স্বপ্ন হলেও এইটায় একটা বাস্তবতা আছে।
আর সেটা হলো আমার অপেক্ষা।
যেটা শেষ হয়তো কোনোদিন হবে না…..

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *